বাংলাদেশসহ ৪ দেশে প্রস্তুত হচ্ছে ‘আইসিটি নেটওয়ার্ক’
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণ সহায়তা ও সরকারের অর্থায়নসহ সর্বমোট ২৮ দশমিক ৬১ কোটি টাকা ব্যয়ে সাসেক ইনফরমেশন হাইওয়ে প্রকল্প (বাংলাদেশ অংশ) বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের মূল লক্ষ্য সাসেক দেশসমূহ (বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটান) এবং গ্রামীণ জনপদে শক্তিশালী তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সংক্রান্ত নেটওয়ার্ক সৃষ্টি ও তার ব্যবহার বৃদ্ধি করা। এছাড়া প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্যগুলো হচ্ছে, সাসেক দেশসমূহের মধ্যে স্বল্পমূল্যে আইসিটি সংযোগ উন্নয়ন, স্থানীয় মানবসম্পদের দক্ষতা বৃদ্ধি, গ্রামীণ জনগণের দোরগোড়ায় আইসিটি সুযোগ সম্প্রসারণ, গ্রামীণ মহিলাদের কর্মসংস্থান ও ক্ষমতায়নের সুযোগ সৃষ্টি করা।
টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় সাব-রিজিওনাল সংযোগ স্থাপনের নিমিত্তে পঞ্চগড় বিটিসিএল এক্সচেঞ্জের অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক হতে তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ৫৬ কিলোমিটার নতুন ২৪ কোরের নতুন অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপন করা হয়েছে। তাছাড়া, ঢাকা-মগবাজার বিটিসিএল এক্সচেঞ্জ হতে পঞ্চগড় হয়ে ভারতের শিলিগুড়ি এবং কলকাতা হয়ে শিলিগুড়ির সঙ্গে এসটিএম-১৬ এর সংযোগটি আরো গতিশীল ও শক্তিশালী করতে বিটিসিএল ঢাকা মগবাজার, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও এক্সচেঞ্জ এবং বিটিসিএল চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর এক্সচেঞ্জে ট্রান্সমিশন যন্ত্রপাতিও স্থাপন করা হয়েছে।
উপরন্তু বিটিসিএল ঢাকা মগবাজার হতে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল আগারগাঁও পর্যন্ত দুই কোর অপটিক্যাল ফাইবারের সংযোগও নিশ্চিত করা হয়েছে। ভারত সরকারের প্রস্তুতি সম্পন্ন হলে শিলিগুড়ি হতে অপর অপটিক্যাল ফাইবার শিগগিরই প্রকল্পের আওতায় স্থাপিত অপটিক্যাল ফাইবারের সঙ্গে বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্টে সংযোজিত হবে। ফলে শিগগিরই বাংলাদেশ হতে ভারত হয়ে সাসেক দেশসমূহের মধ্যে সাবমেরিন কেবলের বিকল্প পথে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক সুবিধা প্রাপ্তির লক্ষ্যে নতুন নেটওয়ার্ক চালু হচ্ছে। ফলে ইন্টারনেট ক্যাপাসিটি নেপাল ও ভুটানের মধ্যে বিতরণ করা সহজ হবে এবং বাংলাদেশের জন্য বাড়তি রাজস্ব আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হবে। সাসেক দেশসমূহের মধ্যে সাব-রিজিওনাল সংযোগ নিশ্চিত করা ছাড়াও প্রকল্পের আওতায় দেশের ৩০টি উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে উপজেলা তথ্য ও সেবা কেন্দ্র বা কমিউনিটি ই সেন্টার (সিইসি) স্থাপিত হয়েছে।
প্রতিটি কেন্দ্রে বা সিইসিতে ৩টি করে ল্যাপটপ এবং ৩টি করে ডেস্কটপ কম্পিউটার, ফটোকপিয়ার, রঙিন ও সাদাকালো প্রিন্টার, স্ক্যানার, ডিজিটাল ক্যামেরা, আপদকালীন যোগাযোগের জন্য ৬টি করে ইউএসবি মডেম, মোবাইল ফোন ও মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরসহ প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র সরবরাহ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবস্থার উন্নয়ন করে আইসিটি মার্কেট স্থাপন এবং আইসিটি খাতের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে পল্লী অঞ্চলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে পল্লীর জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়নের নতুন ক্ষেত্র সৃষ্টি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া আন্তঃদেশীয় সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে পল্লী অঞ্চলে তথ্য প্রবাহ নিশ্চিত করে দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টির সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। সাবমেরিন কেবলের ব্যবহার সহজ ও জনপ্রিয় করা যাবে এবং এর সীমাবদ্ধতা দূর করা সম্ভব হবে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সাউথ এশিয়া সাব-রিজিওনাল ইকোনমিক কোঅপারেশন ভক্ত (সাসেক) দেশগুলোর ইনফরমেশন কমিউনিকেশন টেকনোলজি ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে সাসেক ইনফরমেশন হাইওয়ে স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে চার দেশের মধ্যে সরাসরি অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক স্থাপনের জন্য একটি আঞ্চলিক প্রকল্প নেয়ার বিষয়ে সবাই একমত পোষণ করেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ অংশে ঢাকা থেকে পঞ্চগড় জেলার বাংলাবান্ধা পর্যন্ত অপটিক্যাল ফাইবার ব্যাকবোন স্থাপনের প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। এবং বাস্তবায়নের সময়কাল ধরা হয় ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০১১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করতে না পারায় প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে কাজের মেয়াদ বাড়ানো হয়।
এ ব্যাপারে সর্বশেষ গত বছর ১৪ সেপ্টেম্বর তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে বলা হয়, SASEC ভূক্ত চারটি দেশের সাথে রিজিওনাল নেটওয়ার্ক স্থাপনের জন্য গৃহীত এস্টাবলিশমেন্ট অব সাসেক ইনফরমেশন হাইওয়ে (বাংলাদেশ পার্ট)-এর কাজ সমাপ্ত হয়েছে। এখন শুধু আন্ত:সংযোগের জন্য অপেক্ষা।
লিখেছেন : মিজানুর রহমান সোহেল
লিখেছেন : মিজানুর রহমান সোহেল
0 comments:
Post a Comment